Saturday, June 2, 2018

দুটি কবিতা অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়






সিলিং ফ্যান
                        

মনে হয় যেন নিরালম্ব ,ঘরের ভিতরে চিল ।যাবজ্জীবন শুধু দৃষ্টিজ্বালা ।ঘুরে ঘুরে খোঁজে পথ । এ সংসার উষ্ণতা বিহ্বল ,তাকে কেবল উপজাতে চেনে ।

তার এই নিরন্তর সন্ধানের পথে অধুনা সে কিছুটা নড়বড়ে হয়েছে ,তাই অসুয়াপ্রবণ । এমনকি আমাকেও একযোগে মু্নিষ ও মিস্ত্রি ,প্রেমিক ও গৃহস্থ রূপে মঞ্চ-সফল বলে মনে করে আর রট রট করে কথা কয় ।

কোনদিন একা পেলে নির্মম শাসানির সুরে বলে ওঠেঃ সবকটি খরস্রোতা নদী সমুদ্র থেকে উঠে আসতে চাইছে ক্ষুব্ধ বিছানায় ।জেগে উঠতে চাইছে বন-জ্যোত্স্নার ভিতর ফেলে আসা সাপের খোলস

বয়সকালে এমন প্রলাপ শুনলে কার না মাজেলে শিক-তাতা দিতে ইচ্ছে হয় ।আমি তবু তার নাটবল্টু টাইট করে কিছুটা নারকেল তেল দিই ।

রাত্রে ভোল্টেজ বাড়লে সে মাতালের মত উদার হয়ে যায় ।আমিও বর বউ বাচ্চার তিনফোটো-মার্কা একটা বিড়ি ধরাই ।দুজনেই দুজনার মাদকতাময় হাওয়া খেতে খেতে জানালা দিয়ে দেখি মহালক্ষী বাগানের প্রেত প্রকাণ্ড শপিং মলটার চারপাশে ঘুরে ঘুরে কাকে যেন খুঁজছে ।



রহনি
                                       

জ্যৈষ্ঠের বার দিনে বারনি তেরো দিনে রহনি

এই খর দিনে তাতা মাটিতে প্রথম বীজ ফেলল চাষি ।ধানলক্ষীর এই হল রহনি বতর ।

মৌ্নব্রতী হয়ে ঘরে ফিরে এল । সঙ্গে নিয়ে এল বীজপূন্যার পবিত্র মাটি ।

কিন্তু ব্যাপারটা ওখানেই চুপচাপ মিটে গেল না সেদিন ।কালিঝুলি মেখে উলুরি ঝুলুরি কত জন বেবাক নাচতে লাগল গাইতে লাগল । গাঁয়ের ছোট ছেলেমেয়েরা আবার হাতে হাতে তাল পাতার বাঁশি গড়ে উর্ধশ্বাসে বাজাতে শুরু করে দিল ।

আকাশের দূর দূরান্তে ঘুমিয়ে থাকা মেঘগুলো হঠাত্ই জেগে উঠল সেই বেসুরো বাঁশির শব্দে ।ভাবল , আমরা সবাই এখানে তবু রুক্ষ পৃথিবীতে এত ব্যাঙ ডাকছে কেন ? ভাইসব চলো গিয়ে দেখে আসি আগেভাগে কোন ভায়াদ গিয়ে পাত পেড়ে বসে পড়ল ।

No comments:

Post a Comment