Sunday, June 3, 2018

উস্কানিমূলক কোহলের সন্ধানে : অরিজিৎ চক্রবর্তী

ক্রোড়পত্র: কবির নীরবতা ও নীরবতার কবি







উস্কানিমূলক কোহলের সন্ধানে


জাহাজটি থিসিউসের।বন্দর ছেড়েছিল অনেককাল আগে। তারপর থেকে যুদ্ধে যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে এক সময়ে এক অচেনা বন্দরে আটকে পড়ে। এবং জীর্ণ হতে থাকে। আস্তে আস্তে মেরামতিও চলে। প্রথম বদল হয় মাস্তুল, কিছুদিন চলে, তারপরে দাঁড়, আবার কিছুদিন, তারপরে একটি করে পাটাতনের কাঠ।প্রতিটি পর্যায়েই তো সেটি থিসিউসের পুরনো জাহাজ থেকে সামান্যই বদলেছে---"একই" জাহাজ বলতে কোন স্তরেই কোন বাধা হয়নি। কিন্তু শেষে যখন তা ফিরে এলো ঘরের বন্দরে তখন আর তাকে চেনা যাচ্ছে না। যে জাহাজটি বন্দর ছেড়ে গিয়েছিল, তা কি অভিন্ন? শুধু ওই " থিসিউস" নামটি ছাড়া।অভিন্নতার কথা বলা যায় না ভিন্নতা ছাড়া।লাইবনিৎস অভিন্নতাকে বুঝেছেন সবরকমের সমধর্মিতা দিয়ে।শুকতারা আর সন্ধাতারা একই অথচ এ সকালের,আর ও সন্ধ‍্যার।এই সকাল-সন্ধ‍্যা ছেড়ে দিলে আর তো কোনো ভাবে তাদের আলাদা করা যাবে না।তেমন ভাবেই "কবির নীরবতা" এবং "নীরবতার কবি" এই শিরোধার্য বর্মমৈথুনে কবিরা হলেন দৃশ‍্যাতীতের সমীকরণ।কাব‍্যে ও স্বভাবের মধ‍্যে সমসত্বতা ( homogeneity ) হারিয়ে ফেলার টানাপোড়েন।বস্ত্তুবাদীরা মনের ওপর বস্তুকে স্হান দেন।কাজেই বস্তুই একমাত্র বিষয়ভূত বাস্তবতা। আবার বস্তু নিত‍্য গতিময় ও পরিবর্তনশীল। এবং মায়াপীড়িত। তাই জীবনবীজের মায়াপীড়িত ধ্বনিময়তার মতো কবিরা কল্পনাশৃঙ্খলার 'সত‍্য' অথবা 'মিথ‍্যার' প্রাখর্যে নিয়মবদ্ধ সিমেট্রি থেকে নিজেকে মুক্ত করেন।একে বলা যেতে পারে ভাষার উৎপত্তির শ্রমতত্ব ( Labour theory of the origin of speech ) প্রথমে শ্রম এবং তার পরে ভাষা। ভাবনার শ্রমে ভাষার অন্বেষণ একজন কবির বৈদগ্ধ‍্যের দ‍্যুতি। বিস্ময় বিজরিত সেই নীরবশাসিত পরমের কাছে পাঠক খুঁজে পান অনিঃশেষ প্রবাহমানতা। সুতরাং বলতেই হচ্ছে পৃথিবীর কোনো কবি নীরব নন। নীরবের ভণিতায় তিনি অনেক বেশি উস্কানিমূলক দ্বান্দ্বিক।গ্ৰীকদের কাল থেকে চলে আসা একটি অসামান্য প‍্যারাডক্স যা সোরাইটিস প‍্যারাডক্স ( Sorites. Paradox) নামে খ্যাত।কেউ যদি সারাজীবন প্রেমের কবিতা লিখে যান, তিনি প্রেমের কবি হিসেবে বিবেচিত। আবার বিদ্রোহের কবিতা লেখেন বেশি পরিমাণে, তিনি বিদ্রোহী কবি। যখন গ্ৰামবাংলার পল্লী জীবন কবিতায় ঘুরে ফিরে আসে, তখন তিনি পল্লী কবি। বাংলা কবিতায় এরকম অনেক শিরোধার্য কবির নাম আমাদের অজানা নয়। কিন্তু গণিতের Fuzzy Set Theory-র দৃষ্টি থেকে এবং যে কোন কবির কবিতাকে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়; প্রতিটি কবিতার ভেতর শব্দের একটা উপচ্ছায়া অঞ্চল আছে।অনির্দেশ‍্যতার মাত্রা অনুভূতি আছে। সুতরাং কবিতা মাত্রেই আসঙ্গ কোলাহল।কোহলসন্ধানও বটে।
কবি--- এককোষী--- ছত্রাক--- মানুষ--- প্রেমিক--- পাখি--- যোনি ---- জ্ঞানী--- লিঙ্গ--- নীল--- হারামি--- অনিল
আরও কত কী।  নীরবতার অসীম কন্ঠস্বর কিংবা টপলজিক‍্যাল পৃথিবীর  প্রথম ঈশ্বর।

No comments:

Post a Comment