Saturday, June 2, 2018

গুচ্ছ কবিতা সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়




মেঘনাদ জন্ম

দিনের শেষে পাতা ওল্টালে একটুকরো আকাশ দেখি না।
বরং মেঘের পেটে মেঘনাদ জন্মই সার্থক হয়ে উঠছে।
মেঘটাকে লাল বই সাদা দেখি না আজকাল।
যতটা জলীয় কণা শুষে ইঞ্চি ইঞ্চি মেঘ জমা হয়,
সে সবই লোহিত কণিকা মেশা।
তুঁতে রঙ আমাদের ভীষণ প্রিয়।
মেখে ও মাখিয়ে দিই চোরাগোপ্তা কিংবা উল্লাসে।
পৃথিবী - ক্রমশ বরফের ঘরে আস্তানা গাড়ছে।
আততায়ীরা সকলেই মেঘনাদের বংশোদ্ভূত।
লুকিয়ে রেখেছি এর ওর আস্তিনে।
আমাদের স্পার্মে ও ওভারিতে কোন রাম, রহিম জন্ম লেখা নেই।


পিতৃঋণ
কেন যে থেকে থেকে আজ এতো ডাকছি !
আপনি সাড়া দিচ্ছেন না। অথচ,
হে প্রতিপালক পিতা,
আজ আমার প্রতি আপনার এই সহৃদয়তার কারণ অনুগ্রহ করে বলুন।
আপনি চলে যাচ্ছেন বারবার আমার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।
আমি তো বেশ আছি,
খাওয়া দাওয়ারও কোন ত্রুটি হয় নি। পিপাসাও নেই।
তবে আপনি আজ এতো উদ্বিগ্ন কেন পিতা?
আজ পরিবেশ বেশ অন্যরকম। 
সবাই কেমন নতুন পোশাক পরেছে।
সবাই কেমন সুরমা এঁকেছে চোখে। 
আতরে ম ম করছে চারপাশ। 
হাসছে সবাই, আলিঙ্গন করছে পরস্পরকে।
সুন্দর সুন্দর হিজাবে উচ্ছসিত রমণীর দল।
ভিড় বাড়ছে ক্রমশ দোকানে আজ।
ক্রমাগত খটাখট শব্দ ভেসে আসছে পর্দার ওপার থেকে।
আমি বোনকে দেখতে পাচ্ছি পিতা -
আপনার কোলের কাছে ঘুমিয়ে পড়েছে,
তার ধরহীন মাথাটা।



এক ঘড়া জল

জল নেই, জল নেই ! কোনওখানে জল নেই !
এ মাটির বুকে রুক্ষসার শেকড় দেখে হতাশায় ভুগছে গাছ।
আর পাখি? ডানার নীচে খটখটে পালক খুঁটে একরত্তি ঘাম পায় না।
পাতাঝরা ডাল খরতপ্ত নীলের বাথানে চাতক হয়ে চেয়ে থাকে।
পাখিরা রুখাসুখা ডালেই জড়ো করে খড়কুটো।
বাসা আছে, ছানা আছে, আর আছে -
পাথরের নিচে চাপা পড়ে যাওয়া অতৃপ্ত ইচ্ছেদের সমাধি।
ঠিক যেমন এ গাঁয়ের বধূর বুকে ফুটে ওঠা কলি ছিঁড়ে যায় বারবার
রাক্ষুসে স্বামীর লিঙ্গের দাপটে। 
আর বছর বছর শুষ্ক স্তন টেনে টেনে দেহের শেষ রক্তবিন্দু পান করে
সদ্যজাত শ্বাপদ।
এখানে প্রকৃতি সর্বদাই মধ্যমা উত্থিত করে আছে। 
পোড়া গ্রামের পোড়া নদীরা পাথরে পাথরে ঠোক্কর খেতে খেতে
পায়ু ও যোনির মধ্যস্থতা শিখে নেয় - এক ঘড়া জলের আশে।


ফাইলবন্দী সুড়ঙ্গ

মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবেনা আমার ফাইলের কথা। 
ওর চোখে নতুন চশমার ফ্রেমটা নতুন মেঘের সঞ্চারী গান শোনাচ্ছে। 
আমরা সবাই ওর মুখাপেক্ষী আজকাল, 
পিডিএফ খুলে দেখে নিতে হয় 
আকাশটা আবির রঙা কিংবা 
বাতাস ছুটছে সান্ধ্য লোকালের সাথে পাল্লা দিয়ে।
আমার ফাইলটার কথা মনে পরে গেলো। 
ওর মধ্যে একটা অন্ধকার সুড়ঙ্গ আছে। 
ফাইল খুলে কাজ করতে করতে সবার অলক্ষ্যে আমি নেমে যাই সেই সুড়ঙ্গ পথে। 
সুড়ঙ্গের অপরপ্রান্তে আছে নদী, দীঘি, পদ্মপাতা, বাংলা ভাষায় স্লোগান...
টুক করে আমি কাকচক্ষু দীঘির জলে নেমে যাই, 
আঁজলা করে জল তুলে আচমন সারি
তারপর প্রশান্তির হাসি মেলে উঠে আসি ফাইলের উপর।
মেয়েটা আমার ফাইলটা হারিয়ে ফেলেছে,
ওকে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবেনা কি করে হারালো। 
চিন্তা হচ্ছে, হারানো ফাইল থেকে এবার সুড়ঙ্গ পথে একে একে উঠে আসবে পিঁপড়ে,
আর হাড় গিলগিলে উলঙ্গ কিছু হাত 
ওরা ভাত চাইবে ঘোলা চোখে,
ভয় হয় ওদের কালিঝুলি মাখা মুখ দেখে 
পাঁজর থেকে হৃদয়টা আড়পাড় দেখা যায়  
রক্তশূন্য, ফেকাসে...
সমস্বরে আর্তনাদ করছে ওরা,
ভাত চাই ভাত ! ভাত দাও ভাত !
কাপড় দাও কাপড় !
আমার ফাইলটা হারিয়ে গেছে, 
মেয়েটাকে দোষ দেওয়া যায়না। 
ওর চোখে নীল আকাশের মেঘ, 
আর মন্বন্তরের এপারে বসে 
আমার রোজ কালো সুড়ঙ্গ খুঁজে ফেরা


2 comments:

  1. প্রত্যেকটা কবিতাই সুন্দর।অভিনন্দন।

    ReplyDelete
  2. ধন্যবাদ তনুশ্রী

    ReplyDelete