সূর্যাস্তরঙের বকুল ফল
সূর্যাস্ত-কমলা রঙ নদীর জামায় ছিটকে পড়ে
পানের পিকের মতো ছোপ ছোপ যেখানে সেখানে...
দ্রুত জামা খুলে নদী জলে ডুবিয়ে ঘষে নিতেই
আরও ছেতরে যায় কমলাভ,
জুতোর তলায় লাগে---
স্রোতের ওপর ছাপ রেখে চক্রবালে হাঁটে নদী
তোমার মগ্নতা দেখে,
তুমি যেন ধৈর্যশীল বক...
তোমার পায়ের কাছে বাঁধানো শান ছিলনা বলে
এবড়ো খেবড়ো পাথরে রুমাল শুকোতে দিয়েই ফিরে
গিয়েছিল মৃদু ঢেউগুলি,
বিকেলের দলবাঁধা
লাজুক কিশোরীর মতন। পকেটে জমে উঠেছে
ভেজা রুমাল-সংগ্রহ, সিক্ত হয়ে তুমি টের পাচ্ছ
অঙ্কুরোদগম,
ব্যক্তিগত বকুলের বীজ ফেটে
চারিয়ে যাচ্ছে ফর্সা শিকড়,
তোমার নাভিকুণ্ডলে
প্রোথিত হয়ে গিয়েছে পড়ন্ত বেলায় কার চারা?
ঝাঁকড়া হয়ে ওঠে কার সবুজ অবদান?
অকুণ্ঠ!
রুলটানা দিনের প্রান্তে শিকড়-ঋদ্ধ লাইনে তুমি
যুবতী করেছ চারা,
সূর্যাস্ত-কমলা ফলে ভরা...
আনন্দউড়ান
সাদামাটা বালকের হাতে ছিল উড়ন্ত আনন্দ
কাঁকড়ার মতন আঙুলের ছিল নিঃশর্ত ব্যস্ততা,
ও বালুকাবিজরিত পথ,
কতক্ষণ ধরে তুমি
নেচেছ কচি পায়ে পায়ে যে,
থামল তোমার বহতা?
তোমার অভিধানেও ক্লান্তি? নিরালা বলয় গড়ে
গর্তের সাপের মতো পড়ে থাকে দৃশ্যহীন ছাঁচে?
উড্ডীনানন্দের খুশীবর্ণ গায়ে বিজ্ঞাপিত
করে
বালক-আগমনে জেগেছ তুমি শিকারের আঁচে?
তোমার সুদীর্ঘ দৈর্ঘ্য শেষে অপেক্ষায় ছবি-গ্রাম
গ্রামে এক নিকনো উঠোনে বালিকার হামাগুড়ি,
খড়ের চালে তাকানো কুমড়ো ছাপিয়ে বাড়ন্ত ডাল
ছায়া ঢেলেছে যেখানে,
সেখানে দেবী ভাজছে মুড়ি...
পথ, তুমি
কেন থামালে না ক্রিয়াশীল বেলুনচাকা?
হীন-স্তব্ধ পিতা-পুত্র, উড়ে
যাচ্ছে কষ্টের দশ টাকা...
এই কবিজন্ম,
আগুন ও দ্বন্দ্ব
থান-পরা পৃষ্ঠা করুণা জমা করে
স্বল্প দূরত্ব পার হয়ে আমার
দুই চোখের সাদা উপত্যকা ভরে
চেষ্টা করে যায় কিছু সান্ত্বনার
প্রথম লাইনের জন্য প্রণিহিত,
সময়ের উনুনে আমিপোড়া অনল---
এই অর্পণ,
ব্যাপ্ত কাতরতা
তোমার জন্যও আমার অর্গল
ভেঙ্গে কি কখনও হুড়মুড়-বারতা
নিয়ে দস্যুসম ঝাঁপিয়ে পড়েছিল?
অথবা সমস্ত আমার সঞ্চয়,
তোমার প্রস্তারে বিছিয়ে দিয়েছিল
আরও সবুজ রং?
রং মাড়িয়ে আমি
হেঁটে গেছি তোমার তীব্র নিরালায়;
প্রথম লাইনের মতো অবগাহন
পরাবো বলে শুধু তোমারই গলায়...?
দ্বিমুখী দ্বন্দ্বের মাঝে ওড়ে আমার
প্রথম লাইনের জন্য প্রতীক্ষা,
নীল কবিজন্মে কড়া নাড়ে তোমার
লাটাই-ধরা হাত, সূতোবাঁধা বীক্ষা...
No comments:
Post a Comment