Saturday, June 2, 2018

গুচ্ছ কবিতা ঐশী চক্রবর্তী






সমুদ্রস্নান 

জলেতে গা ডোবালে দু'চারটে মাছের আদলে গড়া মানুষ দেখা যায়, অহিংসক হতে পারে তারা, নিয়তির এক কথাতেই ধর্ম- অর্থ- কাম- মোক্ষ ছেড়ে, দ্বারকা নগরীতে গিয়ে বসতি স্থাপন করে নিজেদের স্ত্রী- পুত্র-কন্যার মুখ ভুলে গেছে। 
জ্যোৎস্নাকে তারা রাত ভাবে, নক্ষত্রদের নৌকো। পৃথিবী থেকে বৈকুণ্ঠে যেতে গেলে এক একজন নক্ষত্রকে পারের কড়ি দিতে হয়... 
বিশাখা চায় অন্ধকার, আদ্রাকে চুমু, আর স্বাতীকে সুনীল; 
আমি তো নীললোহিতকে চাই--- প্রেমের ছিটেফোঁটা পেলে কপালে চন্দন ঘষে আর নিজেকে ঠাণ্ডা রাখতে হবে না। চারা হবো। গাছ হবো। ছায়া দেবো। উল্টো অশ্বত্থ বৃক্ষ। 
মাটিতেই সংসার পাতবো... দু-একটা হাঁড়িকুঁড়ি, মোটা চাল, এক কৌটো নুন আর গমের দানার মতো একরত্তি মেয়ে... আত্মজা। 

         
 সুইসাইডাল কলকাতা 

আমার শহর রাতের রাণী
কল্লোলিনী কলকাতা
দুঃখ পেলে আঁচল দিয়ে
মুছিয়ে দেবে সব ব্যথা
এই শহরে উজান বয়
নৌকাবিহার,হোরিখেলা
সকাল বিকেল স্নিগ্ধ-শীতল
কাজল টানে রাতবেলা
আমার শহর মাতাল- প্রেমিক
তিলোত্তমা কলকাতা
হাতের শিরা ক্ষত'য় ভরা
থাইয়ে গভীর দাগ কাটা
মেট্রোরেলে ঝাঁপায় মানুষ 
শহরেরও ইচ্ছে হয়
 
এক নিমেষেই জীবন শেষ
 
তিলে তিলে মৃত্যু নয়।
আমার শহর ডিপ্রেসিভ 
ওড়নায় তাই মুখ ঢাকা
 
অ্যাম্বিয়েনের শিশির হাতে
আর জাগে না কলকাতা।
                             

নৈসর্গিক 

মাথার ওপর স্বর্গ নেই, শুধু তুমি আছো, 
আমি তোমার চোখ দিয়ে নিজেকে দেখি...
মভ কালারের চুড়ি, দীঘির মতো ঘের দেওয়া ঘাঘরা, কাঁচের পাথর বসানো ঝুমকো দুল। 

আমার বিরাট ভুল হয়ে গেছে, কবিতা লিখতে গিয়ে কবিকে ভালোবেসেছি! 
কিছুটা প্রেম-ঘৃণা মিশিয়ে,  ক্ষমার যোগ্য অপরাধ নয়, তাও... 
''না চাহিলে যারে পাওয়া যায়'';
আমি মরে গেছি তার প্রেমের নেশায়!  
সে আমায় চায় না, তার পূর্বরাগ, অভিসার, মিলন সবই অন্য নারীর সাথে...  
আদরের প্রেমিকা... 

আমার কান্না শুধু তোমায় ঘিরে থাকে, 
তোমার তো ব্যথা নেই, তুমি কেন কাঁদো! 
আমি মোম হয়ে গলে যাই, বৃষ্টি এলে চাতকী... 
ঘন শ্রাবণের দিনে বা কালীপূজোর রাতে যখন হিম পড়ে আমি আবছা আলোয়   অতীতকে দেখি। ছাদে মোমবাতি নিয়ে আমি আর বাবা... এইতো সে দিনের কথা! 

আমার নিয়তি আমাকে ঠিকই মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাবে, 
তার আগে অনন্তকাল ধরে, তোমায় জড়িয়ে কাঁদতে চাই!! 

প্রেমিক-দেবতা 

যে মন্দিরে দেবতা ছিলেন প্রেমিক 
 চোখের তারায় ভাসতো ঘন নীল 
অবিকৃত শিলায় ফোটে রূপ 
 সর্বশরীর জীবন্ত ....শিথিল । 

চায়নি সোনা - গলায় মুক্তোহার 
ছিঁড়ে পড়ে গেছে বুকের মাঝ থেকে 
সেবাদাসীর আঁচল ভরা ফুলে উপাসনা 
পুজার থালায় বয়ে আনে ঘি-চন্দন মেখে। 

যে মন্দিরে শঙ্খধ্বনিতে মিশে থাকতো আশা 
নবকলেবরে দেবতা ছিলেন ভক্ত সমাবৃত 
আভরণহীন নীলাভ দেহে প্রেমের ব্যাকুলতা 
ঠোঁটের হাসি উঠত হয়ে মেঘ-বিষাদিত। 

স্নানের পরে রাজার বেশে প্রভু কল্পতরু 
মানত পেতেন কাজল চুলের লাগামছাড়া রাশ 
তমাল গাছের শাখায় বাঁধা আশায় ভরা ঢিল 
বৃষ্টি পড়ে অঝোর ধারায়, তখন শ্রাবণ মাস । 

যে স্থানে বাজত বাঁশি রাতে 
 রৌদ্রপ্রভায় আশিস হতো তা 
একা নারীর শূন্য মনে স্বপ্ন আঁকা ঘর 
 যে মন্দিরে প্রেমিক ছিলেন দেবতা।

No comments:

Post a Comment