Saturday, June 2, 2018

অণুপ্রবন্ধ - অর্ঘ্য দত্ত বক্সী







অণুপ্রবন্ধ - a compilation of observations - চিন্তাকল্প - an inductor effect - a need of briefness of time
কিছু চিন্তা থেকেই একটি text এর জন্ম হয়। এবার কেউ তাকে গদ্য বানান কেউ বা প্রবন্ধ। যে যে বিষয়ে স্বচ্ছন্দ সেই ভাবেই একটি expression বেরিয়ে আসে। আগে academician/critical আর creative লেখার মধ্যের দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনতে প্রগদ্য / প্রগল্পের( প্রবন্ধমূলক গদ্য বা গল্প) প্রস্তাবনা এনেছিলাম। এখন আরো একটি এমনই ফর্ম নিয়ে কাজ শুরু করেছি যারও উদ্দেশ্য তথ্যকে যেভাবে academicianরা ব্যবহার করে চাইলে ইচ্ছা করে আমাদের বিভ্রান্ত করতে পারেন তার বিরোধিতা করা। এখানেও academicsকে সাধারণ পাঠকের "হৃদয়ের" কাছে নিয়ে যাওয়া উদ্দেশ্য। সঙ্গে পাঠককে নিরপেক্ষ তথ্য provide করে তাকেই আহ্বান করা যাতে সে তার প্রবন্ধ বানিয়ে নেয়। 
অণুপ্রবন্ধের লক্ষ্যও তাই। যেসব কবি ও পাঠক ভাবেন, চিন্তা করেন, হয়তো অনেক unique বিষয়বস্তুই ভেবে ফেলেন কিন্তু তারা তাকেexpress করেন না text এর আদলে। philosophical কবিতায় চলে যান অনেকটা অপারগ হয়েই। তাদের এমন একটি স্পেস থাকা দরকার যেখানে সেই চিন্তাকে observations গুলোকে তারা সাজিয়ে ২০০ কি ৩০০ শব্দের মধ্যে অণুপ্রবন্ধ বা অণুtext বানাবেন। 
চিন্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিই। জানি কোন চিন্তাই একক চিন্তাখণ্ড
নয়। চিন্তা একটি স্রোত যা সেই ব্যক্তির যে reality ( এমন কি একসাথে বড় হওয়া দুই যমজের রিয়ালিটিও এক নয়, reality is very much like finger print. each person has his own unique reality) তার সঙ্গে সঙ্গে সময়ের প্রবাহের মতো বয়ে চলেছে । তার collective personal unconscious conscious এবং যাবতীয় তার পরিচয়গুলির( হিন্দু ,কায়স্থ, engineer) unconscious conscious বিক্রিয়ায় যে unique চিন্তা তার তাকে ১০০% ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তার নাম দিয়েছি চিন্তাকল্প। তার মধ্যে থেকে যেগুলি খুব কমন যেগুলি বারবার ফিরে ফিরে আসে তারা চিন্তাগুচ্ছরা লেখককে দিয়ে লিখিয়ে নেয় বড় বড় উপন্যাস বা গল্প। 
কিন্তু তাতে নির্মাণ লাগে, তার একটা স্থাপত্য আছে ( শুধু passion দিয়ে একটি ভালো উপন্যাস/গল্প হয় না)। একটি এমন মূলগত চিন্তাই শয় শয় পাতার উপন্যাস হয়েছে এমন উদাহরণ নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। গল্পের ক্ষেত্রে এসে সেই চিন্তাকে আরো কম ভূষণে অলংকৃত করেই পাঠকের কাছে আনা যাচ্ছে। সময়ের দাবিই হল কম সময়ে যা পড়ে ফেলা যায় ও লেখকের বক্তব্য বা চিন্তাকে যত তাড়াতাড়ি বুঝে নিয়ে নিজের বিচার ও thought processএ চলে যাওয়া যায়। চিন্তাকে কবিতায় নিয়ে যেতেও বহু মুন্সিয়ানা লাগে যা কবিতা শিল্পের minimal দাবি। সৌন্দর্য নির্মাণ অনেক হল। ভুলে গেলে চলবে না যে শিল্প এখনও for the betterment of massই করতে হবে। mass কে educate করাই আদর্শ। নতুন কবিতা শুধু পাঠককে আনন্দ দেয়, সেটাও মহৎ কিন্তু যথেষ্ট নয়। 
চিন্তাকে তার স্পার্কস সহ যেভাবে সে এসেছে আর যা যা সংযুক্ত চিন্তাগুলির সঙ্গে রাইজোম্যাটিকভাবে conscious এ নিজেকে কল্পের আকারে ধরা দিচ্ছে তাকে সেই inductive force সহ ও নির্মাণের বাধ্যবাধকতামুক্ত করে যদি কিছু লিখে ফেলি তবে তাই হোক অণুপ্রবন্ধ, অণুtext. এর মাধ্যমে অন্তত অনেক বেশি মানুষকে যাদের হয়তো বড় গল্প লেখার মুন্সিয়ানা নেই তাদের ভাবুক হতে প্রাকটিস করানো যাবে। আর মানুষ অনেক বেশি নিজের চিন্তাকে একেবারে শুদ্ধভাবে প্রকাশ করে ও আদানপ্রদান করে নেবে অতি দ্রুত। একেবারে সাধারণ পাঠকের জ্ঞান ও চিন্তার বিকাশ হবে নিয়মিত চর্চা হবে তাও ন্যূনতম কবি লেখক license ছাড়াই। চিন্তা নিজেই চিন্তার সঙ্গে communicate করে নিক। আমরা শুধু ব্রহ্মের জয়গান করব।
আর যেভাবে একটি অণুগল্প লেখার সময় লেখক তাকে ফেবু পোষ্ট নয় বা messenger whatsapp post মনে করেন না শিল্পই মনে করেন তেমন বা তার থেকে ফর্মে একটু কম গুরুত্ব দিলেও বাম্পার চলে যাবে অণুপ্রবন্ধ। তাছাড়া অমিতাভ প্রহরাজ তো comments whatsapp message messenger post এর মধ্যেই এখন শিল্পের বীজ আর বাংলা লেখার ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন। 
পাঠক এবার কলারতোলাহীন এই প্রস্তাবটিকে বিবেচনা করুন।

সীতা ও শকুন্তলা :

অরণ্য কাণ্ডের সপ্তম সর্গে আমরা একটি আশ্চর্য কথা হঠাৎ শুনলাম। সুতীক্ষ্ণ মুনি রামকে বলছেন— এ আশ্রমে কিছু মৃগ আসে যারা আশ্রমিকদের প্রলোভন দেখায়, এছাড়া অন্য ভয় বেশি কিছু নেই। সুতরাং সীতাহরণের সময় যে মৃগ সীতাকে প্রলোভন দেখিয়েছিল তা খুব একটা আনকমন নয়। রাম নিজেও তাহলে এই বিষয়ে আগে থেকেই অবগত আছেন। অবশ্য এই মৃগবিষয়ক উপাখ্যান দুষ্মন্তের হরিণ শিকার উদ্দেশ্যে কণ্বমুনির আশ্রমে চলে আসার মাধ্যমে সীতা ও শকুন্তলায় তুলনামূলক মোটিভের অনেক মিল পেয়ে যায়। মৃগ ছাড়াও দুজনেই অভিজ্ঞান হিসাবে আংটিকে ব্যবহার করেছেন। দুজনেই পিতা মাতা দ্বারা পরিত্যক্তা, আবার গর্ভবতী অবস্থায়ও স্বামী দ্বারা পরিত্যক্তা। তারা মুনিদের আশ্রমে আশ্রয় পেয়েছেন ও দুজনেরই পুত্রেরাই সেই আশ্রমেই বড় হয়েছেন। সেই পুত্রদের সূত্রেই তাদের স্বামীর সঙ্গে পুনর্মিলন হয়েছে যদিও দুই অভাগীর মধ্যে সীতার গল্পের শেষ ট্রাজিক ... কিন্তু তাতে কিছুই যায় আসে না। শকুন্তলার গল্পও যথেষ্ট প্রাচীন। ভারত তার এই দুই চিরন্তন আখ্যানে অসীম ক্লেশ বিরহ অপমান সহনকারী সতী জননীদের মধ্যেই নিজের আদর্শকে খুঁজে গেছে, এই দুই মহীয়সী মাতার বেদনায় চিরকাল তার হৃদয় দিয়ে অশ্রুর ফল্গুধারা বয়েছে। আর ভারতবর্ষে তাই সবচেয়ে বড়ো  psychic force যে দুঃখিনী মহীয়সী মাতা archetype ( এমনকি রূপকথার দুয়োরানীরা ও বুদ্ধু ভুতুম ) তা বুঝতে ভুল হয়নি বলেই পর পর ঋত্বিক কোমল গান্ধার( শকুন্তলার কাহিনী) আর সুবর্ণরেখা ( সীতায়ণ) কেন বানালেন তা ধীরে ধীরে বোধগম্য হতে থাকে।

 The evolution process:


 আমরা জানি দশাবতার তত্ত্বের রূপকে মূলতঃ ইভলিউশান প্রসেসের বর্ণনা আছে। প্রথমে সমগ্র পৃথিবীই জলমগ্ন ছিল, তাই প্রথম অবতার মাছ। পরে ডাঙা হলে এল উভচর প্রাণী যেমন কচ্ছপ। মানুষ পুরো নয় কিন্তু মানুষ আস্তে আস্তে উৎপন্ন হচ্ছে বোঝাতে মানুষ + পশুশ্রেষ্ঠ সিংহ নিয়ে নৃসিংহ। পরশুরাম দৈহিকশক্তিতে আর লক্ষণে প্রায় উগ্র আদিমমানব/ গেরিলা!
এই বিবর্তনের আরো একটি চিত্তাকর্ষক ও অপেক্ষাকৃত ডাইরেক্ট বর্ণনা আমরা পাই অরণ্যকাণ্ড ১৫ সর্গে। জটায়ুর বিবরণে আমরা শুনি যে প্রজাপতি দক্ষের আটকন্যাকে কশ্যপ ( যিনি শেষ প্রজাপতি ) বিবাহ করেন। তাদের নাম অদিতি, দিতি, দনু, কালকা, তাম্রা, ক্রোধবশা, মনু ও অনলা।
অদিতির সন্তানরা – অষ্টবসু, দ্বাদশ রুদ্র, অশ্বিনীকুমারদ্বয় নিয়ে মোট ৩৩ জন দেবতা ( যাদের তেত্রিশ কটি  বৈদিক দেবতা বলা হয়, যা লোকভাষায় পড়ে তেত্রিশ কোটি হয়েছে)।
দিতির গর্ভে দৈত্যগণ জন্মগ্রহণ করেন। এখানে পয়েন্ট তু বি নোটেড যে “ বন ও সাগর সমেত সমগ্র বসুমতী আদিতে দৈত্যগণেরই অধিকারে ছিল”।
দনু হতে অশ্বগ্রীব , কালকা হতে নরক ও কালক (নরক ও কাল পারসোনা  অর্থে ?)  ও তাম্রা ( তামা বা ধাতু ?) হতে ক্রৌঞ্চী, ভাসী, শ্যেনী, ধৃতরাষ্টী ও শুকী প্রভৃতি পাঁচ কন্যা উৎপন্ন হয়। এরা সবাই বিবিধ পক্ষীর জন্ম দেন। শুকীর কন্যা নতা, নতার কন্যা বিনতা। বিনতা হতে গড়ুড় ও অরুণের জন্ম অরুণের পুত্র জটায়ু ও সম্পাতি। এরা গৃধ্র ও শ্যেনীর সন্তান।
ক্রোধবশার গর্ভে মৃগী, মৃগমদা, হরি, ভদ্রমদা, মাতঙ্গী( হাতি), শার্দুলী(বাঘ), শ্বেতা, সুরভি, সুলক্ষণা, সুরসা ও কদ্রু ইত্যাদি দশজন স্তন্যপায়ীদের জননী কন্যারা জন্মায়। এদেরই সন্তান মৃগ, ভল্লুক, সিংহ ও বানর ( হরির গর্ভে ), হাতি প্রভৃতি। সুরভির কন্যা রোহিণী হতে গো ও গন্ধর্বী হতে অশ্বের জন্ম। সুরসা সর্পের জননী।
মনু হতে মনুষ্য আর অনলা হতে বৃক্ষের জন্ম ( বৃক্ষই আগুনের উৎস )
কি আশ্চর্য না! অন্তত পক্ষী, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ীরা যে মানুষের আগে আবির্ভূত হয়েছে এ তথ্য নির্ভুল আছে। এই হল রামায়ণের যুগের বিবর্তন বিষয়ক ধারণা। তবে এদের মধ্যে যে যে ক্ষেত্রে মানববৈশিষ্ট দেখা যায় তার কারণ টোটেমপ্রথা। যেমন রেড ইন্ডিয়ান্ডদের ঈগল বা চৈনিকদের ড্রাগন তেমনই কিছু কিছু জাতি নিজেদের পাখি বা বানর ( বা-নর ... নরের মতো ) ভেবেছে। ডানা বা লাঙ্গুল ( লেজ ) যার অলংকার এবং যাদের স্বভাব সেই টোটেম প্রাণীর অনুরূপ ( বানররা কামুক, চঞ্চল আর গৃধ্ররা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন)। না হলে রাবণ জটায়ু যুদ্ধটার বিবরণ পড়ে কেউ বলবে না যে ওটা অন এয়ার হচ্ছিল ( পদাঘাত বা স্পষ্ট বর্ণনা আছে রাবণের রথ নষ্ট হওয়ায় ভূতলে যুদ্ধ হল ) 
এক সংস্কৃত বিশেষজ্ঞ হয়ত আরো ভালো এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন শব্দরুট বিশ্লেষণ করে। আর তাই তো চাই... ইঙ্গিতগুলো দিয়ে যেতে চাই ভবিষ্যত গবেষণার জন্য।

রামায়ণ বিষয়ক অনুপ্রবন্ধ ৩ :  মস্তিষ্কের গল্প

আমরা হিন্দু পুরাণে খুব বেশি একটির অধিক মাথা দেখি না। এক যা ব্রহ্মার চারটি ছাড়া মাথার আধিক্যে মিথ দশগ্রীবই। (আর দশ মাথা আছে হাইড্রা নামক গ্রীক সর্পের । অবশ্য রাবণের বৈদিক শব্দার্থ বিশ্লেষণ করে সুকুমার সেন দেখিয়েছেন রাবণ অর্থে সাপও বোঝায় যে কিনা সীতাকে জলের মধ্যে বেষ্টন করে বন্দী করে রেখেছে )। তাও চার সংখ্যাটি যেহেতু সৃষ্টিতত্ত্বমণ্ডলাকার বর্গক্ষেত্র স্বস্তিক যন্ত্র বেদ যুগ ইত্যাদি চার সংখ্যাটি সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত তাই চার মাথা তবু সিম্বলিক্যালি মানা যায়। কিন্তু চালু কথায়, ঠাট্টা তামাশায়, ছড়া গান ব্রতকথায় রাবণ এবং একমাত্র রাবণ যার দশ মাথা এক বিস্ময়ের ও প্রবলভাবে ইউনিক ব্যাপার। মনস্তত্বের ছাত্র হিসাবে ভাবতে ইচ্ছা করে এ হল multiple personality যদি তাকে disorder নাও বলি। দশ মাথা দশ ইন্দ্রিয় এ তত্ত্ব অবশ্য প্রচলিত কিন্তু কেবল ইন্দ্রিয় দশটিই নয় এবং রাবণের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে আমরা তার মাল্টিপল পরস্পরবিরোধী ক্যারেক্টারিটিক্স পাব। শৈশব ও কৈশোরে মাতৃনিষ্ঠ রাবণ লঙ্কা সিংহাসন অধিকার ও রাক্ষস সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর এক একনিষ্ঠ অস্ত্র ও শাস্ত্রানুধ্যায়ী। তারপর প্রবল ব্রহ্মচর্য ও তপস্যা দ্বারা ব্রহ্মাকে তুষ্ট করে বরলাভ। বসুন্ধরার শ্রেষ্ঠ ক্ষাত্রশক্তি যে রাক্ষসরা তা সদম্ভে ঘোষণার জন্য দৈত্য গন্ধর্ব দেবতা এমনকি যমের সঙ্গে যুদ্ধ ও বিজয়লাভ । ক্রমে ভারতের একনায়ক হয়ে ওঠা। সর্বগ্রাসী অদম্য যৌন লালসা ও তার জন্য কম দামও দিতে হয়নি তাকে। আবার এই রাবণই অন্যতম প্রাজ্ঞ পণ্ডিত ... শাস্ত্রে ও রাজধর্ম বিষয়ে তার সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডার। আবার একইসঙ্গে তিনি অসম্ভব ছেলেমানুষ কখনো কখনো, একেবারেই ডিপ্লোমেটিক নন। তিনি সন্তানের দুঃখে ভেঙ্গে পড়েন , তিনি মন্দোদরীর কাছে বার বার তিরস্কৃত হন, তিনি বার বার হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে আফসোস করেন , ভাগ্যকে দোষ দেন। গ্রে শেডের এই মানুষটির এতগুলো পরস্পরবিরোধী বৈশিষ্ট্য যে dissociative personality ( multiple personality এর আধুনিক নাম) এর যে বেসিক ক্যারেক্টারিটিক্স তার সঙ্গে তা মিলে যায়। তার চরিত্রে consistency নেই, তার এক একটি মাথা জানে না অন্য মাথার মধ্যে কি কাজ করছে, এক এক মাথা তার আসলে এক এক রকম মুখ!! একাদশ মুখ বা ইন্দ্রিয় মনএর আয়নায় এই দশ মুখ একে অপরের অচেনা, আলাদা আলাদা চরিত্রের। এমনও কেস স্টাডি পাওয়া গেছে যেখানে একটি মানুষের মধ্যে ১০০০ এর বেশি পারসোনাপাওয়া গেছে যারা কেউ কারো
বিষয়ে অবগত নয়। তাই মাথা কেটে রাবণকে কিন্তু মারা যায়নি, কারণ তা অসংখ্য। একটি মূল পারসোনা থাকে যেই হয় self, অন্যান্য পারসোনাগুলি পর্যায়ক্রমে আসে, তার মতো ব্যবহার করে , আবার মিলিয়ে যায় । মূল পারসোনার এ বিষয়ে কোন চেতন স্মৃতি থাকে না। মনে হয় একই মানুষ এক এক সময়ে এক এক রকম ব্যবহার করছে। রাবণের মতো গ্রে শেডের মহামানবের তাই দশ মাথা হওয়ার কথাই ছিল।

পুষ্পক রথঃ

পুষ্পক রথের যে বর্ণনা আমরা পাই তাতে পুষ্পক রথ প্রকৃতই পুষ্পের(পদ্ম) মতো গঠনের। তার বহিরাবরণ শত/সহস্র দলযুক্ত, তার ভিতরের গঠন দশ দল ও একেবারে অভ্যন্তরে মূল বেদি। পুষ্পকরথ ও তার উড্ডয়ন প্রকৃতপক্ষে কুলকুণ্ডলিনী সাধনার প্রতীকায়ণ। বীর্য সুষুম্নাকাণ্ড দিয়ে ক্রমশঃ মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে উর্দ্ধদিকে বিমানের ধর্মেই চালিত হয়। এবং দশ থেকে শত হয়ে সহস্র দলে মিলিত হয়। পুষ্পকের কোরকটি হল সুষুম্নাকাণ্ড। ক্রমশঃ তার উর্দ্ধস্তর দশ দল, তার উর্দ্ধে শত ও সবচেয়ে উর্দ্ধে সহস্র। এবার এটিকেই ভার্টিকাল ভিউতে দেখুন। সবথেকে বাইরের পরিধি হবে সহস্রদল, তার ভিতরের পরিধি শতদল, তার ভিতরে দশ ও সেন্টারে সুষুম্না। এবং বীর্য দশ শত ইত্যাদি কাল্পনিক স্তরগুলি উদ্ভিদের মতোই বিমানের মতোই উড়তে উড়তে ভেদ করতে করতে আরো উচ্চতায় উঠছে। প্রাথমিকভাবে পুষ্পকের দুটি বিস্তারিত বিবরণ আমরা পাই রাবণের সীতাহরণে ও দ্বিতীয়ত রাম যখন সীতাকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে যাচ্ছেন।
প্রথমটিতে রাবণ বা দানবীয় অশুভ শক্তি সহস্রদল অধিকার করে আছে, যেমন বারবার দেবতারা অসুরদের কাছে স্বর্গের অধিকার হারিয়েছেন। সেই সময় যে প্রকৃতিশক্তি সহস্রারে উড্ডীয়মান তা মিলন নয়, তা ধর্ষন বা সীতাহরণ। সেই উড়ান তাই রাবণের। আবার সহস্রদল থেকে দানবীয় প্রবৃত্তিকে অপসারিত করার পর প্রকৃতির হয় fire ordeal তাতে যাবতীয় taint কে পুড়িয়ে শুদ্ধ হয় প্রকৃতি। সদ্‌পুরুষের সঙ্গে মিলনের পর এবার শূন্যতায় লয় হয়ে যাওয়ার পালা। সেই যাত্রাই লঙ্কা থেকে আবার সেই পুষ্পক রথেই সহস্রারের উপরের চক্রগুলি ভেদ করতে করতে অযোধ্যার উদ্দেশ্যে পুরুষ ও প্রকৃতির যৌথগমন। এই ব্যাখ্যায় তাই ধারণা করা যায় কেন মনের আজ্ঞানুবর্তী মনোরথ পুষ্পক কৈলাসে তার গতি হারিয়েছিল যখন সে ছিল রাবণের অধীন।
অবশ্য আমরা মেঘনাদকেও বিমান বিশারদ হিসাবে রামায়ণে পেয়েছি। হনুমান সুন্দরকাণ্ডে লঙ্কায় বেশ কতকগুলি বিমানের দেখা পেয়েছিলেন। আবার রাম যখন সীতাকে নিয়ে লঙ্কা থেকে অযোধ্যায় ফিরছেন তখন আধুনিক যুগের বিমান থেকে নীচের দৃশ্য যেভাবে দেখা যায় সেই ভাবেই বর্ণনা দিতে দিতে যাচ্ছেন। পথে সীতার ইচ্ছায় বিমান নামিয়ে বানর মহিষীদের তুলেও নিচ্ছেন পুষ্পকে। বর্তমানযুগের বিমান পদ্ম আকৃতির নয় কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই আমাদের উড়নচাকী বা flying saucer এর কথা মনে পড়ে যায় না কি? যুগে যুগে মানুষ এই আশ্চর্য জিনিষটি দেখে এসেছে তা একটি modern myth, আরো এগোলে একটি মানসিক টেন্ডেন্সি বা ঝোঁক যা সারা পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষ বার বার দেখে এসেছে, সুতরাং এটিও একটি আর্কিটাইপাল ব্যাপারই। এটি  mandala symbol যা কিনা আধ্যাত্মিকতার ও self actualisation প্রসেসে চরম পর্যায়ে দৃষ্ট প্রতীক। এই সব সুতরাং গাণিতিকভাবে বৃত্তের দর্শনও সংযুক্ত হয়ে যায় পুষ্পকের সঙ্গে। পুষ্পক হয়ে ওঠে বহুস্তরীয় প্রসঙ্গের খনি। 






No comments:

Post a Comment