Saturday, June 2, 2018

গুচ্ছকবিতা - শুভদীপ নায়ক



পঞ্চবিংশতি



নির্মম নিয়তি আর সুখগুলো বাদে
বাকিটা সময় তোমাকে মনে পড়ে
হে আমার, পঞ্চবিংশতি—
লক্ষ ঝড়, অযোনিজ অগ্নি, দারুণ বিবাদ
সবকিছু মিলিয়ে অঘোর আঁধার তোমাতে


এ এক বিপুল ঘর, ছদ্মবেশ
যেখানে দরজার দু’পাশে মানায় তোমাকে
তপস্বীরা হয়ে আছে বিধান, হয়ে আছে ঈশ্বর
আমাকে আমার ভিতর পুঁতে ফ্যালে
যে মানুষ, তালুতে সত্য রেখে—
বলো, কথা বলো আরও— 
হে আমার পঞ্চবিংশতি






নিঃশ্বাস




নিয়ে গেল আমার মরা
আমার ভিতর থেকে, এতকাল পড়েছিল
কেউ জানত না, কেউ কখনও বিশ্বাস করে না
নিজেরই মরদেহ কাঁধে করে ঘুরে ফেরে মানুষ
আকাশে পাখিরা ওড়ে, ওরা কেউ মৃত না
জলের গভীরে মাছ, ওরাও জীবিত 
শুধু পথে পথে, পায়ে পায়ে, হঠাৎ কখনও যদি
চোখে না পড়ে কোনও সজীব চোখ
ছোঁয়া না লাগে কোনও অবৈধ স্থানে
যদি অহেতুক কথা না হয়, ঘষা না লাগে মনে
বাড়ি ফিরে মারা যায় সকল মানুষ


আমিও মরেছি গতকাল রাতে 
ভুল করে ট্রামডিপোর অন্ধকারে
দু’টো নিটোল স্তনে চুমু খেয়ে, 
তার চুল-শাড়ি-ঠোঁট ঘেঁটে নিয়ে বলতে পারিনি
ডুবে মরার সামান্য আগে
আমি বুক ভরে নিয়েছি বাঁচার সমস্ত নিঃশ্বাস






স্তন



বটফলের মতো তার স্তনবৃন্ত 
চারপাশে কালো মেঘ, উল্টানো বাটি চিবুকে বসানো
একদিন আয়নার সামনে দেখেছি তাকে
তারপর আঁধারে মিলিয়ে গেছে দেহ
তারপর কত কবিতায়, গদ্যে-পদ্যে ফিরে এসেছে
তার কালো বুক, উন্মুখ ,—আমার জিভের কাছে
আদিম অনাদি নারী, আমি তার উৎসুক প্রেমিক
মৃগয়া করেছি বনে বনে , ছাই ঘেঁটে দেখেছি
জীবন এখনও পুড়ে কাঠ হয় ঘরে ঘরে
রুটি হয় আঁচে, নিষিদ্ধ আগুন চেটে
আহ্লাদে আখুটে মানুষ তাকে পেটে পুরে নেয়
এদিকে গোপন ঝড়ে ধ্বসে পড়ে রাত
ফুলদানি ভেঙে যায়, উড়ে যায় পরিধান
সিঁদুরে রঙের দিকে মেঠোপথ ছুটে চলে
সন্ধে নামার আগে, ময়লা বিকেল যেন পড়ে আছে
চিন্ময় তার সেই বুকে, যেখানে গোপন স্তন
বেড়ে উঠে একদিন মধুময় করেছিল তাকে






গ্রাম




কতদিন পরে চিঠি লেখা 
আমার জারজ সন্তানকে
ডাহুকবিলের মতো ছুটে ছুটে
ব্রিজের ওপর থেকে পুরনো নদীর দিকে
তাকিয়ে রয়েছ তুমি,—মূক, আদর দ্যাখোনি ?


ধৃত এই অসভ্য দুপুরে
দরজা বন্ধ করে কুমোরের বৌ আর মহাজন
হিসেব নিকেশ ফেলে শুয়ে আছে খাটে
কার কত দেনা বাকি ? কার কত শোধ হল ?
এ হিসেব ষোলো-আনা এখন কে চায় !
বাঁধ ভাঙে শরীরের, ভেসে যায় গ্রামগুলি
নিখোঁজ নিখোঁজ






উৎসব




মা,— উৎসব ঠেকাতে পারিনি আমি ।
মুখময় ভরে ছিল আলেয়া অশোক
আমাকে খামচে ধরে ডানা মেলে নিয়ে গেল
মাংসাশী পাখি, তার নিজের বাসায়
সেখানে সাজানো ছিল বিছানা, পরিপাটি
ঘরময় সুগন্ধি ছড়ানো, আমাকে আনবে বলে
স্নান সেরে সাজগোজ করে নিয়েছে সে 
মদ এনে রেখেছে বাসায়, খোলাচুল
আর গায়ের কাপড়ে ভাজহীন সরোবর আঁটা
আমাকে বলল, ‘এইখানে আমি থাকি , একা ।
আর কেউ থাকে না এখানে । কেউ আপনাকে
যেতে বেরুতে দেখবে না । যখন খুশি আসুন,
আসুন যতখুশি । শুধু আমাকে দেখুন—
হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখুন,—
আপনার স্ত্রীয়ের চেয়ে কতটুকু সজীব আমি । ’



মা,—উৎসব ঠেকাতে পারিনি আমি ।
সেই থেকে নেশায় পড়ে, সেই থেকে মেয়েটির শরীরে
তার মনে, ও-বাড়ির প্রতিটি কোণে আমি যাই আর আসি
মা,—আমি উৎসব বড় ভালবাসি !

No comments:

Post a Comment