গনকঠাকুর কোনওদিন নই, তুমি তো জানোই
প্রিয় পাখি,
কতদিন পরে তোমায় চিঠি লিখছি ভাবত! দিনক্ষন মনে রাখা গনকঠাকুর
কোনোদিনই নই তুমি তো জানোই। তাও, বছর পাঁচেক তো হয়েই গেলো, বলো? লিখতাম না,
কিছুতেই লিখতাম না, যদি না হিন্দোলদা বলত কবি ও তার কবিতা নিয়ে এরকম একটা নীরব
গদ্য লিখতে। কি করে ওঁকে বলতাম বলো, কবিতা তো চলে গেছে আমায় ছেড়ে। সেই যেদিন শাড়ির
আঁচল পিঠে ফেলে চলে গেলে তুমি, ফিরেও আর দেখলেনা, সেদিনই তো সব কবিতা চলে গেল
তোমার পায়ে পায়ে হেঁটে, আমায় নীরব রেখে!
আবার এই এতদিন পরে লিখতে বসে ভাবছি, এসব শব্দ কি কবিতার জন্য?
কবির জন্য? নাকি তোমার জন্য!
এই মুহূর্তে কোলকাতায় সন্ধ্যে নেমেছে। দোতলার এই ছোট্ট ঘরটি আমার বড় আপন। এ ঘরে ঢুকলেই মনে হয় চার চারটে দেওয়াল, ছাদ, মেঝে
সব এক একটা আয়না হয়ে গেছে। যেদিকে তাকাই দেখতে পাই নিজেকে। খটখটে একটা সাদা
কঙ্কালের শাখায় শাখায় জমে থাকা রক্ত, মাংস, পুঁজের স্তর পেরিয়ে ঢুকে পড়ি নিজের
মনন, ভাবনা, কল্পনা, চিন্তার গহন নীরব স্তরে। আর ঠিক এই মুহূর্তে তোমার কথা ভাবতে
ভাবতে টের পাচ্ছি পায়ের তলা ভিজে যাচ্ছে। আঁকা বাঁকা সাপের মতো আমার পায়ের আঙুলের
ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ছে তিস্তা নদী। শুনতে পাচ্ছি নদীর স্রোতের নম্র কলকল্। মনে
হচ্ছে বয়েসটা আমার হাত ছেড়ে পেছনে হাঁটছে। এগিয়ে যাচ্ছে করোনেশন ব্রীজ ধরে,
জলপাইগুড়িতে তোমাদের ওই ছাদের ঘরে। তোমার নিজের সে ঘর। সেই ঘরে বসেই তুমি আমার
সঙ্গে কথা বলো, লেখো, ছবি পাঠাও। আমি দেখি, শুনি, কল্পনা করি তোমাকে। তোমার ছোট্ট
সংসার। তুলতুলে ছেলে। ইংলিশ মিডিয়াম প্রথম শ্রেনী। আর সাদা সাদা লোমের একটা
ভুকভুকে কুকুর। ডাক শুনি ওর। তার নাম নাকি পিংশুটে! তোমার দেওয়া নাম। আর আছে কোর্টে
চাকরি করা তোমার বর। সাইকেলে ফেরে অফিস থেকে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা হয়ে গেলেই তুমি মন
উচাটন। গা ধুয়ে শাড়ি পরো। টিপ পরো। সাইকেলে ক্রিং বাজে কলিংবেলের হাত ধরে। তোমার
বর ঢোকে ঘরে আলো জ্বালিয়ে। আমি আলো নিভিয়ে দিই। একা
বসে থাকি আমার এই ঘরে। নৈশব্দ ঘিরে ধরে আমায়। ছাদে যাই। গুন গুন করে উঠি কোনো সদ্য
শোনা গানের সুরে।
আবার ফোন আসে তোমার। ফিসফিস করে বলে ওঠো, ‘এই শোনো, বেরোচ্ছি!
ও এখন সাজিয়ে বসেছে বিছানায়। নিজে হাতে সব গুছিয়ে গাছিয়ে দিলাম। কিন্তু জানো তো,
এই গন্ধটা একদম নিতে পারিনা আমি। ভক্ করে নাকে লাগে ছিপিটা খুললেই। কিন্তু কি
করি, উনি ওতেই খুশি। বয়ামে রাখা চানাচুর, লাল মশলা দেওয়া আলু ছেঁচকি ছড়িয়ে দিলাম
থালায়। কাঁচের গ্লাসও রেখে এসেছি। ও এখন
টিভিতে ইংরেজি কি এক মারদাঙ্গার সিনেমা দেখতে দেখতে আয়েশ করবে চুমুকে
চুমুকে। আমি বেরোই। মাংস নিয়ে আসি। খেতে চাইল ও। ফিরে আবার রাঁধতে হবে জমিয়ে। বাজারটা
ও একদম পারে না জানোই তো। আমার যদিও একটু জ্বর জ্বর। তাও! আবদার করলো ও। পোস্ত
দিয়ে কাজু ছড়িয়ে মাংসটা খুব ভালোবাসে আসলে। যাই বাজারে। পরে কথা
হবে আবার। কেমন?’
বাড়ির বাগানের ওই শিউলি গাছটা অভিমানী মেয়ের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে
ওঠে। টুপটুপ ঝরে পড়ে দু একটা ফুল, রাস্তার পাশে ওই বুড়োটে ঘাসে। ওই পথেই হেঁটে
যাবে আমার পাখি। যে পথ জলপাইগুড়ির কোনো মাংসের দোকানে শেষ হবে। যে পথে এখুনি উড়ে
গেলো একটা অটো, গুবড়ে পোকার মতো। আমি
আকাশের দিকে তাকাই। পাখিরা ফিরছে ঘরে। আমার পাখি ঘর থেকে বেরিয়েছে ওই। কানের কাছে
শক্তি চট্টোপাধ্যায় এসে দাঁড়ায়। গমগমে সুরেলা গলায় বলে ওঠে...
চন্দ্রমল্লিকার মাংস ঝরে আছে ঘাসে
‘সে যেন এখনই চলে আসে’
হিমের নরম মোম হাঁটু ভেঙে কাৎ
পেট্রলের গন্ধ পাই এদিকে দৈবাৎ
আমি অপেক্ষা করে থাকি। তোমার ফোনের। আমার সংসার ঘড়ি এগিয়ে
চলে। আমার মেয়ে ‘বাবা!’ বলে ডেকে ওঠে ছাদের সিঁড়ির আলো-আবছায়ায়। আমি চমকে উঠি!
কিন্তু কেন? আমি কি অপরাধ করছি তোমার কথা ভেবে? তবে! উত্তরেরা হি হি হেসে উড়ে যায়
চামচিকের মতো। আমি ঘরে ফিরে আসি। কত কাজ বাকি এখন।
আটার ময়ামে আমার ঘাম
পরে টুপটুপ। সেই নোনতা আদ্রতায় জেগে ওঠো তুমি। কড়াইএ সাঁতলে ওঠে মুশুরির ঘ্রাণে,
নাকে আসে তোমার গায়ের গন্ধ। ঘড়ির কাঁটা ঘুরেই যায়।
অপেক্ষার পাহারা দিতে দিতেই আমরা মেয়ে-বাপেতে খেতে বসি। মেয়ে বলে ওঠে, ‘অফিসে কিছু
হয়েছে তোমার বাবা?’ এই প্রশ্নটা তখন প্রায়ই করে জানো। অবুঝ মেয়েটা ভাবে, বাইরে
কিছু হলেই বুঝি মন আনমনা হয়। বাইরের ঘরে যে শুধুই ঝড় আসে, আর তাতে ভেতর ঘরেই যে
তুমুল উলুক ঝুলুক আগোছালো হয়ে যায় কত কি, কবে যে টের পাবে!
মেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে
টিনটিন পড়তে পড়তে। আমি ব্যলকনিতে বসে থাকি। তোমার অপেক্ষায়? না না, তা না।
তুমি কড়া না নাড়লে কি দুঃখ পাব? তাও নয় কিন্তু।
জানি, এই অপেক্ষাটাই তো
সব। মনে হয় তুমি আছো। কোথাও একটা আছো। আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি। আমাদের মাঝে
ভূগোলের মানচিত্র ছড়িয়ে রেখে দিয়েছে কত রাস্তাঘাট, বাস-ট্রাম, কত সীমানার
আঁকিবুঁকি। শুধু অপেক্ষাটুকুই তো কেউ আঁক কষে ঠিকঠিক বলে দিতে পারে নি। এইটুকুই তো
আঁকড়ে আছি।
তাও ফোন আসে তোমার অনেক রাতে। এ কি! পাখি! তোমার গলায় এমন
মেঘ! চোখে কি বৃষ্টি নেমেছে এই মাঝরাতে?
তোমার ঠোঁট দুটোয় ফিসফিসিয়ে ওঠে হেলাল হাফিজ...
কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।
কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না
রাত কাটে তো ভোর দেখি না
কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানেনা।
কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না
রাত কাটে তো ভোর দেখি না
কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানেনা।
-
কি হয়েছে তোমার
পাখি? কিছু বলেছেন উনি? আবার কি তবে...’
-
নাগো। ওসব
অভ্যেস হয়ে গেছে। একটু লেগেছে, এই যা! ছেলেটা সব দেখে, এইটাই যা খারাপ লাগা।
মানুষটা ভালোই এমনিতে। কিন্তু
ওইসব খেলেই কেমন জানি হয়ে যায়। আবার না খেলেও অশান্তি করে। কি করি বলো!
-
কোথায় লেগেছে
পাখি? কেটে যায় নি তো, গালে? ঘাড়ে? পিঠে? আগের দিন তো গাল লাল হয়ে জিভ কেটে গেছিল।
রক্ত পড়েছিল বেশ। ছবি দেখে যা মনে হয়েছিল। বলছিলে, ডিমের ঝোল খেতে গিয়ে মুখ জ্বলছে
তোমার!
-
সব মনে আছে
তোমার মিতা?
আমি দেখতে পাই শক্তিকবি একটা সিগারেট ধরিয়েছে জানলার ধারে।
পুরু ঠোঁটে চিপে ধরা সিগারেটের সাদা ধোঁয়া আকাশে ভাসিয়ে দিচ্ছে কিছু শব্দ...
আমার কাছে আসতে বলো
একটু ভালোবাসতে বলো
বাহিরে নয় বাহিরে নয়
ভিতর জলে ভাসতে বলো
আমায় ভালো বাসতে বলো
ভীষন ভালো বাসতে বলো
জানো পাখি, মনে পড়ে, অফিসে গিয়ে সেসব দিনে মনটা কি উড়ু উড়ু
তখন! আসলে আমারও যে মনের কথাগুলো শোনার কেউ
আছে তাইই তো ভাবিনি কখনো। আমার আমিত নামটা যে কারও কাছে ‘মিতা’ হয়ে যেতে পারে
ভেবেছি কোনোদিন! আমাদের অফিসটা বিক্রিবাট্টার অফিস। মোটা মোটা বিদেশি বই বিক্রি।
সকালটা বেশ সরগরম থাকে। কম্পিউটারে কী-বোর্ডের ঝড়। চায়ের গন্ধ। লেড়ো বিস্কুটে
আয়েশি কামড়। ওদিকে মিটিং রুমের
দেওয়ালে আলো ফেলে হিসেব নিকেশ। গম্ভীর মুখ করে আলোচনা চলে। তারপর সেলস এর ছেলেগুলো
হুম হাম করে বেরিয়ে যায়। আমি একা হতে শুরু করি। তারপর একা একা হাঁটতে হাঁটতে ফাইলগুলোর
দরজা খুলি। পাতায় পাতায় বাণিজ্যের হিসেব আউড়াই। লোকে বলে আমি নাকি খুব গুছিয়ে কাজ করি। হবেও
বা! পিওন হয়ে ঢুকে হিসেব-নিকেশে হাত পাকিয়ে
ফেলেছি বলে লোকের এই গদগদ ভাব। ইসস, যদি ওরা জানত,
নিজের জীবনটায় কিছুই গুছিয়ে উঠতে পারিনি
আজও!
দুপুরে রোদ বাড়লে ক্যান্টিনে টিফিনকারি খুলি। পরোটা আর
আলুভাজা। তরকারিটা বদলে বদলে যায়। কখনও রুটি এসে শুয়ে থাকে চুপটি করে। নেতিয়ে থাকে।
মাইক্রোওয়েভ তাতিয়ে উষ্ণ করে দেয়। ওই আমার শরীরেরই মতো! কেবল
তফাৎ এই যে, মাইক্রোওয়েভটাই হারিয়ে গেছে বহুদিন!
হঠাৎ তোমার ফোন এসে
আমার চিন্তার সুতো ছিঁড়ে দেয়।
-
এই শোনো, একটা কবিতা শুনবে? বিজয়া
মুখোপাধ্যায়ের? আমি না চমকে উঠেছি জানো! দুপুরে ঠাকুর ঘরটা সাফসুতরো করছিলাম।
তোমাকে তো বলেছি এই ঘরেই বইগুলো সাজিয়ে
রাখা। চারিদিকে বইগুলো ছড়িয়ে বসেছি গুছোতে। এই বইটা খুলেই কবিতাটা পেলাম। ছ্যাঁত
করে উঠল বুকটা। কবি কি আশে পাশে দাঁড়িয়ে আছেন? আমাকে দেখছেন?
এখন আমার সব বই ঘুমন্ত, তার মাঝখানে
চুপ করে বসে আছি
ওদের ঘুমোবার আভা আমার গায়ে এসে লাগে
দরজা বন্ধ করা থাক। এদের নিঃশব্দ শান্তি
আমাকে মুছে নিক
মাথা থেকে নেমে যাক গতদিনের ভার
আরো কিছু স্তব্ধতার পর
কারো মুখে হাত রেখে বলে উঠিঃ ওঠো
জেগে ওঠো, এইবার একা
আর তারপর
এইসব নিরিবিলি দেখাশোনা, তোমার আনন্দে
আমার আনন্দ জেগে-ওঠা।
তোমার কথা শুনতে শুনতে আমি এঁটো হাত ধুয়ে ফেলি। কাজের টেবিলে
গিয়ে বসি। নেড়ে চেড়ে দেখি একবার খবরের কাগজের পাতায় পিপড়ের মতো শব্দদের হেঁটে চলা। পায়ে পায়ে রক্ত নিয়ে
চলেছে ওরা। রাজনীতির রক্ত, বিদ্বেষের রক্ত, ক্ষমতার রক্ত। হেঁটেই যাচ্ছে ওরা। আমি
বন্ধ করে দিই। দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসে। আমি বেরিয়ে পড়ি। কবে যেন মেয়ে ব্রেণচপ আনতে
বলেছিল। বিকেল ছুঁলেই মিত্রক্যাফের সামনে
মাথাখাওয়াদের ভিড়। একটু দেরী হলেই পাওয়া যাবে না জানি। তাই পা চালিয়ে চলেছি
সেদিকে। হঠাৎ দেখি তুমি, হাঁফাতে হাঁফাতে আমার পাশে এসে দাঁড়ালে। ‘এত ডাকলাম,
শুনলেই না?’
-
কোলকাতা কখন এলে?
-
এই তো, মনকে বললাম কোলকাতা। মন হুশ
করে বলল, এই তো, যা!
আঙ্গুলে আঙুল জড়ালো। মহানগরের রাস্তায় হেঁটে চলল দুটো মানুষ।
রাস্তা পেরোতে পেরোতে নীরেন চক্রবর্তী মুচকি হেসে বলে উঠলেন,
আলগা করে রাখি আঙুল, আঁকড়ে ধরে রাখার জন্যে
ধুলোর মতো হিরে এবং মাটির মতো সোনা
অনেক দূরে ঘুরে বেড়াই অনেক কাছে থাকার জন্যে
এইটে যদি বুঝতে , কোনো সমস্যা থাকতো না।
দোকান থেকে বেরিয়ে দেখি তুমি নেই! ওমা কোথায় গেলে গো? সামনের
পেট্রোল পাম্পে তুমি নেই! পাশের পান দোকানে তুমি নেই! হুশ করে যাওয়া বাসের পা
দানীতে তুমি নেই! চলে গেলে? আবার যেন মিইয়ে যাই আমি। থুপ থুপ করে হাঁটতে থাকি
বৃদ্ধ বকের মতো। অনেক স্রোত পেরিয়ে বহু খেয়া বেয়ে বাড়ির গেটে এসে দাঁড়াই। নিঝুম
বাগানে ততক্ষনে সন্ধে নেমেছে। দরজায় তালা। বেশিরভাগ দিনই এমন হয়।
মেয়ে তো ওর দিদিমার
কাছে এখন। আদরের নাতনী। দরজা
খোলার আগে ধপ করে বসে পড়ি বারান্দার সিঁড়িতে। অশরীরির মতো লাগে আমার বসে থাকা
ছায়াটাকে। ঝিঁ ঝিঁ পোকা মৃদু ডেকে চলে। আর কোনো শব্দ নেই কোথাও। খাঁ খাঁ চারিদিক।
সন্ধ্যের শাঁখ বুঝি
বেজে গেছে বাড়িতে বাড়িতে। অন্ধকারের নীরবতায় আমার নেশা লাগে। বুঁদ হয়ে যাই। শক্তি
চাটুয্যে বোতল সাজায়। জড়িয়ে জড়িয়ে বলে ওঠে,
জীবন যাপনে কিছু ঢিলে ঢালা ভাব এসে গেছে
চেতনার ক্ষিপ্র কাজ এখন তেমন ক্ষিপ্র নয়
কেমন আলস্যে আমি শুয়ে থাকি, আর দেখি চাঁদ,
বাঘের মুড়োর মতো চাঁদ পড়ে আমার বাগানে।
আমি পিতলের চাবি ঢুকিয়ে তালা খুলি। খুট করে শব্দ হয়। আমার
ঘরের অন্ধকার নড়ে চড়ে ওঠে। আলো জ্বালি। মুখে চোখে জল দিয়ে ঠান্ডা হই। এর পরের
ছবিগুলো পাতা উলটে যায় পর পর। সেই নিজে হাতে চা করে পাখার তলায় একটু বসা। একটু পরে
রুটির ওপরে আলতো ভুষি। সেই চাপড়া মেরে উড়িয়ে দেওয়া গুঁড়োগুলো। খাবার টেবিলে বসে
দেখি, থকথকে পায়েসের কাদায় রুটির চাদর বিছিয়ে আমার মেয়ে আঙুল চাটছে! আমি টিভির বায়োস্কোপে চোখ রাখি। ভালো লাগে না।
গাছ ধরে নেচে ওঠে প্রেম। বুড়োবুড়ি ষ্টেশনে হাত ধরে। আমার জীবন একই থেকে যায়! ট্রিং
শব্দে মেয়ে তাকায়। ‘ওই যে তোমার উনি!’ আমি কি লজ্জা পাই? কে জানে! এস-এম-এস করেছে
আমার পাখি। লিখেছে, ‘মেইলটা চেক করেছ মিতা? চিঠি দিয়েছি। এবারে
কিন্তু এত্ত বড় চিঠি চাই’।
লাল টুকটুকে ডাকবাক্সে হাত বাড়াই। জানলা দিয়ে চিঠি ঠোঁটে নিয়ে
ধূসর রঙা পায়রাটি উঁকি মারে। চিঠি খুলতেই টুপটুপ করে ঘরময় ছড়িয়ে পরে টলটলে জলভরা মুক্তবিন্দু।
আঙুলে তুলে নিই। টলটল
করে। ঠোঁটে দিই। নোনতা স্বাদ লাগে! আঙুল বুলিয়ে নিই ঠোঁটে। মনে হয় আমার পাখির চোখে আমার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলাম। সাদা
খাম খুলে দিই। চিঠি বেরিয়ে আসে। হেলাল হাফিজ এসে হাঁটু মুড়ে বসে।
চোখ তুলে উচ্চারণ করে
ওঠে,
কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।
কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না
রাত কাটে তো ভোর দেখি না
কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানেনা।
নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম
পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পথিক
দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও,
কেই বলেনি ভালো থেকো সুখেই থেকো।
কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না
রাত কাটে তো ভোর দেখি না
কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানেনা।
নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম
পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পথিক
দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও,
কেই বলেনি ভালো থেকো সুখেই থেকো।
আমি শুয়ে পড়ি বিছানায়। সারাদিনের ঘামের
দাগ কাটাকুটি খেলে সারা শরীরে। হাতের মোবাইলে জেগে থাকে তোমার ছবি। শুতে কষ্ট হয়।
কুঁকড়ে থাকি। পাশ ফিরে শুই। বড় যন্ত্রনা। সারাদিন ব্যস্ততার মুখোশে যন্ত্রনা ভুলে
থাকার ভান করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাই পাখি। তুমি হাত বাড়িয়ে দাও। যন্ত্রনায় বুলিয়ে
দাও তোমার আঙুল। তারপর, ছবি থেকে বেরিয়ে আসো আমার পাশে! ঘাড় ছাপিয়ে যাওয়া ফর্সা পিঠে আমি আমার ক্ষয়াটে
কুঁচকোনো আঙুল রাখি। কালচে বুড়োটে ঠোঁটে সবুজ রঙ এসে লাগে। আমি আল্পনা দিয়ে চলি
তোমার পিঠে।
তুমি চোখ বুজে দাও। বার বার বলো, ‘আমায়
যেতে হবে। ও জেগে উঠবে, এখনই’। আমি আরও
আঁকড়ে ধরি। দুহাত দিয়ে আগলে রাখতে চাওয়া পুরুষ হয়ে উঠতে চাই। তোমার নরম বালিয়াড়িতে
পা টিপে টিপে হাঁটতে থাকি। ওই তো একটা আপেল গাছ। হলদে মরুদ্যানের বুকে লাল হয়ে
জেগে আছে যেন! হঠাৎ শামসের আনোয়ার মনে পড়ে
যায় আমার!
তোমার স্তনে হাত রাখলে মনে হয় যে একটা
ছোতট পাখি চেপে ধরেছি মুঠোর ভিতর;
জোরে চেপে ধরলেই মরে যাবে
আঙুলের দগা বুলিয়ে বুলিয়ে আমি তোমার
স্তনের পালকগুলো খাড়া করে তুলি।
স্তনের ঠোঁটের মুখে গুঁজে দিই মমতার ক্ষুদ এবং কুঁড়ো
তখন খুশিতে ডাকতে শুরু করে তোমার স্তনদুটো
ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়ায় আমার মুখ, কপাল, বুক এবং ঘাড়ের ওপর।
হঠাৎ তুমি ডানা ঝাপটাতে থাকো। আমায় জোর করে সরিয়ে দিয়ে হুশ
করে ঢুকে পরো মোবাইলের ছবিতে। আমি একরাশ একাকীত্ব আবার গায়ে মেখে বাকি রাত কেঁদে
চলি!
আমি জানি পাখি তোমার অভিমান। চিরদিনই তো এমন তুমি। ‘নাউ’ অর ‘নেভার’।
হয় এখনই নয় কখনোই নয়! এইই তো বলতে আমায়। যেদিন কোলকাতায় এসে হুট করে ফোন করে
জানালে, ‘আধঘন্টার মধ্যে ডায়মন্ড প্লাজায় চলে এসো। অপেক্ষা করছি কিন্তু...’ আমি তো
অবাক! বলে কি মেয়েটা! নাকি ঠাট্টা? না, সত্যিই তুমি সেদিন আমার মহানগরে। যশোর
রোডের কাছে এক আত্মীয়ের বিয়েবাড়ি। কিছুক্ষন পরপরই দেখছি তোমার ডাক সেদিন।
‘অফিস থেকে বেরিয়েছ?’।
আমি কুঁকরে যাচ্ছি। টেবিলে রাখা জগটা থেকে জল ঢেলে গলায়
ঢালছি ঢকঢক।
‘আর কতক্ষন?’
আমি ফাইলে ডুব দিচ্ছি। যেন প্রচুর কাজ আছে। আসলে কাজ খুঁজে
নিচ্ছি আরো। ডুবে যেতেই হবে আমায়।
‘উফফ, আমি কিন্তু দশ মিনিট ওয়েট করছি মিতা, কখন আসবে?’
আমি অফিসের ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াই। ওই দূরে মনুমেন্ট। ঋজু।
হিংসে হয় আমার। আমি যে অমন হতে পারিনা আর।
‘কি হচ্ছে কি মিতা? তুমি সত্যিই আসবে তো?’
আমি পাশের দোকানে গিয়ে দাঁড়াই। রমেশ পাঁড়ে কেটলিতে আগুন দেয়।
বড় ভাঁড়ের চায়ে চুমুক দিই। ‘সাব আভি আপনার দর্দ সহি হ্যায়?’ বলে ও। চেনে
আমাকে।
‘চলতা হ্যায়, জিন্দেগী হ্যায় ভাইই’।
‘শুনা হে আপ মুঠঠীভর দাওয়াই লেতে হো। জাদা দাওয়াই খানেসে গড়বড় নেহি
হোতা?’
‘ক্যায়া কারে, ওহি মেরে নসীবমে হ্যায়’।
আমার ফোন আসা বন্ধ হয়। কাজে মন দিই। টিং শব্দে তুমি ছুটে আসো
আবার, মুঠোফোনের উড়োচিঠিতে। সেই তোমার হেলাল হাফিজ!
অতো বেশ নিকটে এসো না,
তুমি পুড়ে যাবে,
কিছুটা আড়াল কিছু ব্যবধান থাকা খুব ভালো।
বিদ্যুত সুপারিবাহী দু’টি তার
বিজ্ঞানসম্মত ভাবে যতোটুকু দূরে থাকে
তুমি ঠিক ততোখানি নিরাপদ কাছাকাছি থেকো,
সমূহ বিপদ হবে এর বেশী নিকটে এসো না।
কিছুটা আড়াল কিছু ব্যবধান থাকা খুব ভালো।
বিদ্যুত সুপারিবাহী দু’টি তার
বিজ্ঞানসম্মত ভাবে যতোটুকু দূরে থাকে
তুমি ঠিক ততোখানি নিরাপদ কাছাকাছি থেকো,
সমূহ বিপদ হবে এর বেশী নিকটে এসো না।
কান্না পায় আমার। চোখ দিয়ে একফোঁটা জল
গড়িয়ে পড়ে। মেঘ ডেকে ওঠে কোলকাতার আকাশে। বৃষ্টি হবে! পাখি কি ছাতা এনেছে আজ? বাড়ি
ফিরতে ফিরতে ভিজে যাবে না তো!
বহুদিন পরে ট্যাক্সি নিই। কোলকাতার
বৃষ্টি দেখতে দেখতে বাড়ি ফিরি। রাস্তায় প্রতিটি নারীর অবয়বে ডানা ঝাপটানো আমার
পাখি। বৃষ্টিতে নয়, চোখের জলে ভিজতে ভিজতে ফিরছে জলপাইগুড়ি!
আমি ঘরে ঢুকি। সেই তালা খোলা, সেই
প্যাঁচানো সিঁড়ি, সেই স্যাঁতসেতে ঘর। এসব পেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াই। সামনের
মাঠটা জলে ভরে গেছে। আশপাশের গাছপালা বর্ষার আনন্দে উল্লাসে মেতেছে। অথচ এই মাঠটার
মুখোমুখি বহুদিন হতে পারিনি আমি! এখনও মাঝে মাঝে, অসুবিধে হয়। ধরাস করে বন্ধ করে
দিয়ে দৌড়ে চলে আসি।
‘বাবা, কেন এসব পুষে রেখেছ?’ মেয়ে বলে
ওঠে বিরক্ত হয়ে।
পোষাই বটে। আমার পাখির মতোই পোষা এক স্মৃতি।
কেবল নরম তিরতিরে নয়, তীব্র কটু বিস্বাদ এক অতীত। সেদিন জলে ভরে ছিলো না এ মাঠ।
আলোয় আলোয় ভিজে ছিল। মেলার মৌতাতে আমাদের মহল্লা
থৈ থৈ ভিজছে তখন। লোকজনের ভিড়। দোকানিদের হাঁকডাক। মঞ্চে অর্কেষ্ট্রা। অফিস
থেকে ফিরে অনেক রাতে শিখা আর তিন্নিকে নিয়ে গেছিলাম মেলায়। তিন্নিমা তখন ছ বছরের।
কোলে কোলে। টলোমলো পায়ে। শিখা জেদ ধরল ‘নাগরদোলায় চড়ব। বহুদিন উড়িনি’। কি বলি? আমি
যে ভীতু মানুষ! ওপরে উঠে হুশ করে খাবি খায় যখন দোলা, ভয়ের পাহাড় জেগে ওঠে মনে।
‘মেয়েটাকে কে রাখবে তাহলে? ওসব ছাড়ো না
শিখা!’
‘না না তোমার ভয় কাটাবো আজ। চলো। ওই তো
পুষ্পমাসি। তুলিকে ওই কোলে নেবে। চলো না প্লিজ...’
বারণ করতে পারিনি আমার মানুষটাকে। না
বলার মানুষ আমি নই যে পাখি। তোমাকে বলতে নিজের হৃদয়কে যে কিভাবে খুন করেছি যদি
দেখাতে পারতাম!
যাই হোক, নাগড়দোলার দিকেই এগিয়েই গেলাম।
আসলে শিখার শখ আহ্লাদ কতটুকুই বা পূরণ করতে পারতাম বলো। হুট করে প্রেমে পড়ে বিয়ে।
ওর বাড়ি কত স্বচ্ছল, আর আমি পিওন ফেরত কেরানি। তাও শিখার জেদ, আমাকেই ভালোবাসবে!
বিয়ে করবে!
নাগরদোলা নড়েচড়ে উঠল। যন্ত্রের শব্দে
মাটি থেকে উঠতে উঠতে আকাশ ছুঁয়ে ফেলল। হাত বাড়িয়েই চাঁদ ধরা যায়।
‘ওই তারাটা আমায় এনে দেবে তুমি অমিত?’
শিখার কি হাসি। হা হা হা শব্দ গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে বৃষ্টির মতো ঝড়ছে চারিদিকে। আমি যেন
ভয়ে কাকভেজা এক জুবুথুবু মানুষ মাত্র! একবার... দুবার... তিনবার... । আর মাত্র
দুপাক, বাঁচা যাবে বাবা! মনে মনে জপে চলি। পাশে তাকাই শিখার দিকে। ওপর থেকে নেমে
আসতে হাসতে অট্টহাস্যে বিদ্রুপ করছে জীবনের রক্তচোখ! কিন্ত একি! আলগা হয়ে যাচ্ছি
কেন? এও কি নাগরদোলার কান্ড!
হঠাৎ প্রচন্ড শব্দ, চিতকার,
চ্যাঁচামেচি।
আর কিছু মনে ছিলো না পাখি। তবে জ্ঞান
হারানোর আগে শিখার চিতকার শুনেছিলাম মনে আছে। তীব্র আর্ত চিতকার!
জ্ঞান ফিরে নিজেকে দেখেছিলাম হাসপাতালের সাদা চাদরে।
শিখাকে দেখতে পাইনি। ততক্ষনে ও চলে গেছে মর্গে। আমার ঘুম ভাঙার আগেই!
সারা শরীরে অসহ্য বেদনা নিয়ে আজও বেঁচে
আছি পাখি। মেরুদন্ড ভেঙেচুরে গেছে অনেকটাই । সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারিনা আর। মুখও বেঁকে
গেছে। চোয়ালে জোর লেগেছিল সেদিন! একটা চোখে আর দেখতেই পাইনা। সরু মতো কি একটা কাঠি
বা তার সেচোখে ঢুকে পড়েছিল আমার বাধা না মেনে সেদিন রাতেই! কি কদাকার লাগে মুখটা!
শুধু হৃদপিন্ডটা এখনও চলে, এই যা!
এই অশক্ত শরীর নিয়ে তোমার কাছে যেতে
ইচ্ছে হয়নি পাখি। আমার যে ছবিটা দেখো তা
তো ওই রাতের আগের! অমনই ছিলাম আমি যে! এই ভেঙে যাওয়া খাঁচা বয়ে বেড়াচ্ছি নিজের অনিচ্ছেতেই।
কেন তবে তোমায় দেখিয়ে মন খারাপ করাবো পাখি? বলো তুমি?
এসব সেদিন বলতে পারিনি তোমায়। তেমন
সুযোগও পাইনি। পেলেও হয়ত বলতে পারতাম না! তবে মেনে নিয়েছি সব। এমনটাই তো হওয়ার
ছিল। স্বপ্ন তো ছিঁড়ে যায়ই। ঘুম ভাঙে আমাদের। অভিমানিনী তুমি অনেক রাত কেঁদেছ
জানি। কবুতরী পাখি, জানি আমি তোমায়। তোমার
চোখের জলের ভাষা আমি পড়তে পারি যে। কিন্তু আমি যে কত সুখে আছি কি আর জানো বলো!
তোমায় দুঃখ দিলেও ভেঙে যেতে দিইনি যে! এ কি কম সুখ বলো?
তোমার কল্পনায় আমি সেই মানুষটাই রয়ে
গেলাম যার ছবি তুমি দেখেছ। ওই যে তুমি বলতে না আমাকে, ‘জানো মিতা, তোমার মতো মানুষ
যদি আমার জীবনে আগে আসত!’
‘কেমন মানুষ পাখি?’
‘যে চোখে মহুয়ার রস মাখানো চোখে মায়াবী
এক যৌবন এসে দাঁড়াবে! কোঁকড়ানো চুলের ঢেউ আছড়ে পড়বে আমার সারা শরীরে। ঋজু লম্বা
দোহারা চেহারাটা আমায় ডুয়ার্সের জঙ্গলের মতো ওম দেবে রাতদিন। আর ওই কবিতামাখা মন,
যেন গয়েরকাটা চা বাগানের সেই হিলহিলে সাপের দৌড়। যত তাড়া করি তত ঢুকে পড়ে চা পাতার
গহীন আবছায়ায়’।
আমি জানি, এ চিঠি পেলে তুমি প্রথমেই
বলবে, মিতা, কেন এত পরে এলে বলতো?
আমি তো তোমারই রয়ে গেছি পাখি। যদি দেখা
দিতাম, হারিয়ে যেতাম আমি। তোমার সেই শেষ চিঠিটার কথা আজও মনে আছে। অনেক রাতে
এসেছিল। ভাগ্যিস কম্পিউটারে বসে তখনও। আসলে বহুদিন পরে চিঠি। দেখলাম লিখেছ, ‘এই
শেষ। আর কোনোদিন যোগাযোগ হবেনা’। তিস্তার জলে ভাসিয়ে এসেছি প্রেম। হয়ে বিসর্জন
সবকিছু।
আমি কেঁদে উঠেছিলাম পাখি। দেখছিলাম
চিঠির শব্দগুলো জুড়ে জুড়ে তোমার প্রাণের পুরুষ হেলাল হাফিজের অবয়ব নিচ্ছে। কবি
লিখছেন...
এখন
তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পএ দিওএক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালীর তাল পাখাটা
খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পএ দিও।
ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত
ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পএ দিও।
কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে
কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে
পএ দিও, পএ দিও।
আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেও, আপত্তি নেই।
গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?
আমি না হয় ভালবাসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
পাঁচ দুপুরে নির্জনতা খুন করেছি, কি আসে যায়?
এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতোটা বা কষ্ট দেবে!
কিই বা আর বলার ছিলো বলো, দোয়াতের কালি শুকিয়ে যাওয়া ছাড়া! মেয়েটা একটু একটু করে বড় হয়ে গেলো আমার নড়বড়ে শরীরের সঙ্গে সঙ্গেই। এখন আমার চুলে পাক। বয়স্ক কোঁচকানো চামড়া। পিঠটা আরো একটু কুঁজো হয়েছে। চিৎ হয়ে শুতে পারিনা আর। খুব যন্ত্রনা হয়। গাদা গাদা ওষুধ। তাও যখন কাতরাতে থাকি, ডাক্তা বদ্যি করতেই হয়। মাঝে মাঝে ভাবি, এইই তো জীবন, তার আবার ব্যস্ততা!
ভালো থেকো পাখি। বহুদিন পরে আবার হঠাৎ কত কী লিখে ফেললাম অজান্তেই! এত কথা পোষা ছিল মনের ভেতর! তুলি শুনলে হাসবে জানো! তুমি আমায় ব্লক করে দিয়েছ অনলাইন থেকে। দেখতেও পাইনা কোথায় আছো, কেমন আছো। তোমার পাংশুটেরই বা কি খবর? আর কোর্টবাবু নেশা করে আজও?
যাক, আর কথা নয়। অনেক রাত্রি। এবারে আসি, কেমন?
ইতি,
No comments:
Post a Comment