Saturday, June 2, 2018

কবিতাগুচ্ছ সুমন ধারা শর্মা






সূর্যোদয়

শরীরে শরীরে সূর্যোদয়
মেঘের ফাঁকে আকাশ দেখা রাত
শীতাতপ আঙুল জানে বৃষ্টিতে জারিত উত্তাপ

লজ্জা ঢাকতে নক্ষত্র
আকাশ ছেড়ে ল্যাম্পপোস্টের নিচে বেয়াদপ চলে ফেরে

যা দেখতে মানুষ দিয়েছে হানা
প্রজন্ম তার আপসহীন হাত উঁচিয়ে নিদেনপক্ষে বৃষ্টি
সূর্যোদয়ের খাতে

শরীরে শরীরে সূর্যোদয় সম্মিলিত ক্ষত
বেদনাদায়কও হতে পারে কিংবা বিব্রত



নিঃশব্দে

তোমার জ্বর হলে তোমার ছোটভাই
থার্মোমিটারটা নিয়ে যায়।
সেটা ফেরত পেলে বুঝি, তুমি সুস্থ।
তোমার সরু সরু আঙুলগুলো
তানপুরায় খেলছে। তুমি গাইছ।

তোমার ভিজে বারান্দা। চৌহদ্দি থেকে
জ্বর দিয়েছে পাড়ি।

তোমার স্কুল ইউনিফর্ম। লাল রুমাল।
পতাকার মতো ওড়ে।
বাতিদান উল্লাস করে।
আমার জ্বলে জ্বলে নিবে যাওয়াকে
সিগারেট বলে।

তোমার ভাই আরও একবার
থার্মোমিটার নিতে এলে
তোমার একটা ছবি  চাইব
চিবিয়ে খাওয়ার ট্যাবলেটও চাইব

আমার শর্তহীন প্রকল্পেরা হাসে।
থস্‌থসে রুটি বলে, এসো গল্প করি।
আমি পাশ ফিরি। বিজ্ঞাপনের আলো
জ্বলে জ্বলে কখন নিবে গেছে।

তোমাদের বাড়িটায় আজও
একটা কুকুর শুয়ে আছে।
যার তিন-চারটে বাচ্চা হয়েও
শেষপর্যন্ত একটাই বেঁচে আছে।




জড়িয়ে ধরলেই বন্ধু হয় না

জড়িয়ে ধরলেই বন্ধু হয় না
বন্ধুর মত আচরন করতে হয়
কৃমির মত পাকিয়ে পাকিয়ে উঠি
সীমিত জায়গায় হাঁটি চলি কথা বলি
শুনতেও হয় সময় সময়

অন্ধকার ঠেলে বেরিয়ে আসতে গিয়ে
অন্ধকারে রুদ্ধ হতে হয়
এটাই নিয়ম – বলে উঠে চলে যাওয়া
সেই বন্ধুর দিকে হাত বাড়াই
সে হাত বাড়িয়ে দেয়
যদিও সে আমার বন্ধু না

জড়িয়ে ধরলেই বন্ধু হয় না
তার জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রয়োজন


বাঁচার ইচ্ছে সুবাসিত


বাঁচার ইচ্ছে সুবাসিত
মৃত্যু নগ্ন -
নষ্ট ও সংরক্ষণের জন্য

বাঁচার মধ্যে আনন্দ আছে
তা প্রকাশও করা যায়
মৃত্যুর ক্ষেত্রই অপ্রকাশিত
অসম্ভাব্য
ভাষায় প্রকাশিতব্যও না

যদিও মৃত্যুর বিষয়ে কবিতা বেশি
জীবন-বিষয়ক উচ্চাশা
কবিতার বিষয় হতে পারে না





হাওয়া

হাওয়ার সঙ্গে গল্প করা চলে
তাকে ঠুকরে দিয়ে পালিয়েও যাওয়া যায়

মিউজিয়ামের পাশে একটা বাগান আছে
তাতে অনেকগুলো গাছ আর একটা দোলনা

হাওয়ায় সেই দোলনায় ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ
আমি শুনি। নিবিড় শুনি।

হাওয়ায় জলের শব্দ। অশ্রু।
কারও চিৎকার-কান্নাও থেকে থেকে শোনা যায়

অত্যন্ত বিহ্বল হাওয়ার পাশে একসময়ে
অনেক রাত কাটিয়েছি
একা অথবা কয়েকজন মিলে তাকে
বৃথাই ধর্ষনের চেষ্টা

সে গল্প করে। গল্প শোনে
তার পর সে দোলা দিতে দিতে স্বচ্ছ্ব জানলা
আমরা তার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারি না


No comments:

Post a Comment